প্রিম্যাচিওর শিশুকে মৃত্যু মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেন জিবিপি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ

অনলাইন ডেস্ক, ০৮ নভেম্বর,২০২৪। চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টায় ৬৭০ গ্রাম ওজনের শিশুকে ১.৫ কেজি ওজনে উন্নীত করে সুস্থ করে তোলা হয়েছে। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক সহ শিশু বিভাগের নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীগণ অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে শিশুকন্যার জীবন বাঁচিয়েছেন।

প্রিম্যাচিওর ও কম ওজনের এই শিশুকন্যাটি নানা ধরনের জটিলতায় ভুগছিল। জিবিপি হাসপাতালে শিশু বিভাগের বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক সহ নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসা পরিষেবার মাধ্যমে শিশুর সুস্থ হয়ে উঠার ঘটনাটি নজিরবিহীন। উল্লেখ্য, তানিয়া বেগম নামে কমলপুরের এক মহিলা গত ৭ আগস্ট ২০২৪ ধলাই জেলা হাসপাতালে প্রিম্যাচিওর এক শিশুকন্যার জন্ম দেন।

সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলা নানা জটিলতার জন্য ধলাই জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসলে, মহিলা ও শিশু উভয়েরই জীবন ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় চিকিৎসকরা জরুরীভিত্তিতে প্রসব করান। জন্মের পর শিশুটি মাত্র ৬৭০ গ্রামের ছিল ও শিশুটির অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থাকায় তাকে বাঁচিয়ে রাখাই কষ্টকর ছিল।

এই অবস্থায় ধলাই জেলা হাসপাতাল থেকে শিশুকন্যাটিকে আগরতলার জিবিপি হাসপাতালে শিশু বিভাগে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়। আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালে শিশু বিভাগে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক ডাঃ শ্রীবাস দাসের তত্ত্বাবধানে শিশুটির চিকিৎসা শুরু হয়।

ভর্তির চার দিনের মাথায় শিশুটির জন্ডিস দেখা দেয়, ৭-৮ দিন পর শিশুর ওজন কমতে শুরু করে এবং ওজন ৬৭০ গ্রাম থেকে কমে ৬০০ গ্রাম হয়ে যায়, ১২ দিন পর শিশুটির অবস্থাও জটিল হয়ে পড়ে। শিশুটির শরীরে গ্লকোজের পরিমাণ কমতে থাকে, ২০ দিনের মাথায় শিশুটির রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায় এবং চোখে রেটিনার সমস্যা দেখা দেয়।

জিবিপি হাসপাতালে শিশুরোগ চিকিৎসকদের চিকিৎসায় শিশুটি সাড়া দিতে থাকে এবং ৪০ দিন পর শিশুটিকে এনআইসিইউ থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে শিফট করা হয়। শিশুটির মাকেও শিশুটির যত্ন নিতে বলা হয় এবং চিকিৎসকদের নির্দেশে শিশুটিকে চিকিৎসকদের ভাষায় ক্যাঙ্গারু কেয়ার দেওয়া হয়, যাতে করে শিশুটির দেহে উষ্ণতা সঠিকভাবে বজায় থাকে।

এভাবে টানা ৬৭ দিন পর শিশুটির আবার জন্ডিসের লক্ষণ দেখা দেয় এবং রক্তে অনুচক্রিকা (প্লেটলেট) কমতে থাকে। এতসব জটিল সমস্যা থাকা সত্ত্বেও জিবিপি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞের চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টায় শিশুটি তিন মাস চিকিৎসা প্রদানের ফলে শিশুটিকে সুস্থ করে তোলা হয়।

বর্তমানে শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ১.৫ কেজি। তার অবস্থার উন্নতি ঘটায় চিকিৎসকরা গত ৩১ অক্টোবর শিশুটিকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দিয়ে দেন।

বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকগণ শিশুটিকে সুস্থ করে তার মা-বাবার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে এক নজির সৃষ্টি করেছেন তাই শিশুটির পরিবার আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জিবিপি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক সহ শিশু বিভাগের নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন ও ধন্যবাদ জানান।

শিশুটির মা বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসক এবং নার্সদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিষেবার জন্যই তার শিশুটি বেঁচে আছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানিয়েছেন।

Recent Posts