রাজ্যের সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ভাষা মেপিং করার জন্য রাজ্য সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে : বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪: রাজ্যের সব বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের ভাষা মেপিং (ল্যাঙ্গুয়েজ মেপিং) করার জন্য রাজ্য সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই মেপিংয়ের মূল বিষয় হলো রাজ্যের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মাতৃভাষার সঠিক ভাষা বৃত্তান্ত চিহ্নিত করা। এর মাধ্যমে স্কুলে ভর্তি হওয়া যেসব ছাত্রছাত্রীদের মাতৃভাষা ককবরক তাদের সঠিক অবস্থা এবং সেই স্কুলগুলিতে ককবরক ভাষা জানা শিক্ষকদের সঠিক চিত্র সনাক্ত করতে সহায়তা করবে।

ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর শীঘ্রই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করবে। আজ বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে জনস্বার্থে বিধায়ক বিশ্বজিৎ কলইর আনা দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। বিধায়ক বিশ্বজিৎ কলইর দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশটি ছিলো ‘ককবরক ভাষার উন্নয়নে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে’।

এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন, প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১১৬৩টি বিদ্যালয়ে এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩৩টি বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণিতে ১১৫টি বিদ্যালয়ে ও একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ৬৫টি বিদ্যালয়ে ককবরক অন্যতম বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়।

তিনি জানান, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে অতিরিক্ত ২০টি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ককবরক ভাষা বিষয় হিসেবে চালু করা হয়েছে। ২০১২ সালে ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর প্রতিষ্ঠার পরে এই দপ্তর নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ককবরক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ শুরু করে। এই দপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর বিদ্যালয়গুলিতে বিনামূল্যে বিতরণ করে।

বর্তমানে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য ককবরক পাঠ্যপুস্তক প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং এসসিইআরটি ককবরক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বিনামূল্যে স্কুলগুলিতে বিতরণ করা হচ্ছে। ককবরক সাহিত্যে মোট ৫৯টি বই ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৮ থেকে 2024 সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ২৬টি বই। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ককবরক ভাষার ১৬টি কর্মশালা, সেমিনার, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

ককবরক উপভাষা শব্দ কোষাগারকে / অভিধানকে উন্নীতকরণ করার জন্য ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তরের উদ্যোগে গত বছর ১০-১২ জুলাই তিনদিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিলো। নতুন ককবরক উপভাষা শব্দ কোষাগার প্রকাশনার কাজ চলছে। এই অভিধান শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ককবরক ভাষার সাহিত্য পত্রিকা খুমপুই ও ইমাংনি খুম্বার নিয়মিত দপ্তর থেকে প্রকাশিত হচ্ছে।

প্রতি বছর ককবরক দিবস উদযাপন উপলক্ষে য়াকপাই সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশিত হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য ইতিমধ্যেই একটি অনলাইন ককবরক লার্নিং কোর্স চালু করা হয়েছে। তাছাড়া উমাকান্ত একাডেমিতে কর্মরত পেশাদারদের জন্য ককবরক ও অন্যান্য সংখ্যালঘু ভাষা দপ্তর ককবরক লার্নিং কোর্স পরিচালন করছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রতি বছর ১৯ জানুয়ারি ককবরক সাল (দিবস) স্মরণে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী, এনজিও এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সমন্বয়ে শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ২০২০ সাল থেকে রাজ্যের সমস্ত মহকুমায় ককবরক সাল পালন করা হচ্ছে। রাজ্যের সমস্ত স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সপ্তাহ ধরে ককবরক দিবস পালন করা হয়। গত বছর ৪৬তম ককবরক দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে ৫ জন ককবরক শিক্ষককে ককবরক ভাষায় শিক্ষাদান ও ককবরক ভাষার বিকাশে তাদের অবদানের জন্য সম্মানিত করা হয়েছে।

Recent Posts