অনলাইন ডেস্ক, ১০ জানুয়ারী, ২০২৫: আমার সরকার বিকাশের পথে এগিয়ে চলেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা ও রাজ্য নেতৃত্বের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা, কৃষি ও জনজাতি কল্যাণ সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই রাজ্যের অগ্রগতি হচ্ছে। আজ ২০২৫ সালের ত্রিপুরা বিধানসভার প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনের ভাষণে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নান্নু একথা বলেন। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ” নীতি হচ্ছে উন্নয়নের পথে সমাজের সকলস্তরের মানুষকে নিয়ে এগিয়ে চলার নীতি, যা ত্রিপুরায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। অন্ত্যোদয় অর্থাৎ সমাজের অন্তিম ব্যক্তির উন্নয়ন সাধন হচ্ছে ত্রিপুরার উন্নয়নের রূপরেখার মূলমন্ত্র। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার সকল স্তরের মানুষের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন সমাজ গঠনে কাজ করে চলেছে যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি রাজ্যের প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা নেবে এবং তার সুফলও ভোগ করবে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, শান্তি ও উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া এক উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের ফলে ভারত সরকার, ত্রিপুরা সরকার এবং তিপরা মথার মধ্যে গতবছরের ২ মার্চ এক ঐতিহাসিক ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়৷ এই চুক্তির মাধ্যমে ত্রিপুরার জনজাতি গোষ্ঠীর মানুষদের সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করা হবে। রাজ্যপাল বলেন, আমরা দেখেছি সন্ত্রাসবাদের সমাধানে গতবছরের ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার ও ত্রিপুরা সরকার ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (এনএলএফটি) এবং অল ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স (এটিটিএফ)-এর সাথে একটি সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছে এবং উগ্রবাদী দল দুটিকে ভেঙ্গে দিয়ে মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনেছে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত সরকার ত্রিপুরা জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য ২৫০ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। যারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে এসেছেন। রাজ্যপাল আশা প্রকাশ করেন মূল স্রোতে ফিরে এসে তারা উন্নত ত্রিপুরা ও ভারত গঠনে তাদের ভূমিকা রাখবেন। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, কৃষি আমার সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। রাজ্যের জিএসডিপিতে কৃষিক্ষেত্রের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। রাজ্যে ধানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য 2024 সালের আমন ঋতুতে ১২,৫৮৮ হেক্টর জমিকে মুখ্যমন্ত্রী ইন্টিগ্রেটেড ক্রপ ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের (এমআইসিএমপি) আওতায় নিয়ে আসা হয়৷ এজন্য বাজেট বরাদ্দ করা হয় ১৫ কোটি টাকা। রাজ্যে ২০,১৬১ হেক্টর জমি জৈব চাষের আওতায় রয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত ৬,৫০০ হেক্টর জমিকে জৈবচাষের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, গত আগস্ট মাসের বন্যার পর ১,৪৮,৩৭৯জন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে ১,০০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২,৭৭৭ হেক্টর কৃষিজমি থেকে পলিমাটি সরানোর জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সহায়তা হিসেবে ৪৫,৩৪৯ জন কৃষককে ৯.৪৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে এবং ১৪০৩ লক্ষ সংকর জাতীয় সব্জির চারা ৮,৩৫৪ জন কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় ১৩.৯৭ লক্ষ বীমাকৃত কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এই যোজনায় তাদের ৩২.৯৩ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। ৩.৭২ লক্ষ কৃষককে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড দেওয়া হয়েছে এবং 202530 কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। পিএন-কিষাণের মাধ্যমে ২.৭৬ লক্ষ কৃষককে ১৮তম কিস্তি পর্যন্ত ৭৯০.৫৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, ইউনিফায়েড ফার্মার্স সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে রাজ্যে ৩.৪৩ লক্ষ কৃষক নিবন্ধিত হয়েছেন। তথ্য প্রযুক্তি সুবিধাযুক্ত ৫টি এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গঠন করা হয়েছে। ১.৮৫ লক্ষ কৃষককে সয়েল হেলথ কার্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে ৫৮২ হেক্টর এলাকায় ফলচাষ, ১৭০ হেক্টর এলাকায় মশলা চাষ এবং ১,৭০০ হেক্টর এলাকা সংকর জাতীয় সব্জিচাষের আওতায় আনা হয়েছে। এতে ১১ হাজার কৃষক পরিবার উপকৃত হয়েছেন। তাছাড়াও জাতীয় ভোজ্য তেল মিশন-অয়েল পাম প্রকল্পের আওতায় ১,৮৭৮ হেক্টর জমিতে অয়েল পাম চাষের সূচনা হয়েছে। এতে ১,৮৬ ১জন কৃষক উপকৃত হয়েছেন। রাজ্যপাল বলেন, কৃষকদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই কর্মসূচিতে গতবছর রাজ্যে ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩২,০৭৮ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার দুধের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় কম উৎপাদনশীল ডেয়ারি প্রাণীদের উন্নত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে। 2024 সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৩১,৭৪৮টি গবাদি প্রাণীর কৃত্রিম প্রজনন করা হয়েছে এবং ৩৩,৬০৪টি প্রাণীর চিরাচরিত প্রথায় প্রজনন করা হয়েছে। এরফলে ৫,৪৩৮টি বাছুরের মধ্যে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৪,৩১২টি স্ত্রী বাছুর জন্ম নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীসম্পদ বিকাশ যোজনায় ১২,৪২২ জন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। তাছাড়া 2024-25 অর্থবছরে ৫ হাজার জন প্রাণীপালককে মুখ্যমন্ত্রী প্রাণীপালক সম্মাননিধি প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। তাছাড়াও প্রাণীপালন ভিত্তিক ৩জন উদ্যোগীকে জাতীয় প্রাণীসম্পদ মিশনের অধীনে ২.১০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বন্যার সময় ক্ষতিগ্রস্ত ১,২৪৩ জন প্রাণীপালক আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। রাজ্যপাল বলেন, মৎস্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে রাজ্য সরকার ত্রিপুরা ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড গঠন করেছে। মাছ ও মাছের পোনার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ৪,৯৪৩ জন সুবিধাভোগীকে এবং ২১১টি সমবায় / স্বসহায়ক দলকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৎস্যচাষে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ১১,৬১২ জন মৎস্যচাষিকে মৎস্যচাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মৎস্য বিকাশ যোজনায় 2024-25 অর্থবছরে ১,৩৩৯ জন মৎস্যচাষির মধ্যে ৯০৬টি জাল ও ৪৩৩টি আইস বক্স বিতরণ করা হয়েছে। মৎস্য সহায়ক যোজনায় ২,৪৯২ জন মৎস্যজীবীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনায় ৪০.৯৪ হেক্টর নতুন জলাশয় সৃষ্টি, ১৬টি মোটরসাইকেল, ৬৭টি থ্রি হুইলার এবং ১১৬টি আইসবক্স সহ বাইসাইকেল দেওয়া হয়েছে এবং ১,৬০৪ জন মৎস্যজীবীকে জীবিকা ও পুষ্টি সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্যসম্পদ যোজনায় কৈলাসহর মহকুমার বি সি নগরে ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্ক নির্মাণের জন্য ৪২.৪০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। রাজ্যে মৎস্যচাষের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় টিআরইএসপি প্রকল্পে ২২.২৫ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য কিষাণ সহসমৃদ্ধি যোজনায় এখন পর্যন্ত ৬০,২৮২ জন মৎস্যজীবীকে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের সাক্ষরতা ও মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করছে। এই লক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে কলেজগামী মেধাবী ছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হচ্ছে। গন্ডাতুইসা সরকারি ডিগ্রি কলেজে ৫০ আসন বিশিষ্ট ছাত্রী আবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। শিক্ষকের চাহিদা মেটাতে সরকার রাজ্যের বিভিন্ন ডিগ্রি কলেজে ২০১ জন সহকারি অধ্যাপক নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার রাজ্যে একটি বেসরকারি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।
এই বেসরকারি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হবে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী ওপেন ইউনিভার্সিটি। তাছাড়া রাজ্যে উচ্চশিক্ষার উন্নয়নে ৩টি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ধর্মনগরের আর্যভট্ট আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়, আগরতলায় টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাব্রুমের মনু বনকুলে ধৰ্ম্মদীপা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা হয়েছে। ভারত সরকার শিক্ষাক্ষেত্রের উন্নয়নে লেম্বুছড়ায় কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য ১০০.৮৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজী ভার্চুয়ালি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেছেন। রাজ্যপাল বলেন, ২০২৪ সালের ২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ প্রকল্প চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে যুবাদের কর্মসংস্থানের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য বৃহৎ কোম্পানিগুলিতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দেওয়া। তাছাড়াও পিএম-বিদ্যালক্ষ্মী প্রকল্প উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবে৷ রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ২০০ জন ছাত্রছাত্রীকে উচ্চশিক্ষার সুবিধা দিতে সিএম-সাথ নামে একটি নতুন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের চিফ মিনিস্টার্স অ্যানুয়েল স্টেট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে। পুরস্কার হিসেবে এখন পর্যন্ত ৪৭৫ জন ছাত্রছাত্রী অ্যাপেল আই-প্যাড পেয়েছে। আমার সরকার বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলির জন্য ৪৮০টি শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করেছে। তাছাড়াও ২৪৫৬টি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শীঘ্রই করা হবে। আমার সরকার রাজ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ করতে অনলাইন ভর্তির জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরি করেছে। রাজ্যপাল বলেন, সরকার ২০২৪-২৫ সালে রাজ্যে আরও ২৭টি স্কুলকে প্রধানমন্ত্রী স্কুল ফর রাইজিং ইন্ডিয়ার (পিএম-শ্রী) আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার ফলে রাজ্যে পিএম-শ্রী বিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮২টি। ক্লাসরুমে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান নিশ্চিত করতে রাজ্যের ৮৫৪টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাসরুম প্রকল্প চালু করা হয়েছে এবং এই বছরে ৩২টি নতুন বিদ্যালয়কে স্মার্ট ক্লাসরুম প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সিবিএসই আগরতলায় একটি সাব রিজিওনাল অফিস খুলতে সম্মত হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের পরিকাঠামো উন্নয়নে এই অফিস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে রাজ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নয়ন। 2024- ২৫ সালে স্ত্রীরোগ বিভাগে ৩টি পিজি আসন সৃষ্টি করা হয়েছে এবং আরও ৩টি বিভাগের পিজি আসন বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজে ২০২৫-২৬ বছরে ১৩টি আসন অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। আমতলিতে ১৫০ আসন বিশিষ্ট ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনকরা হয়েছে। তাছাড়াও রাজ্যে হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ত্রিপুরা স্টেটব্লাড ট্রান্সফিউশন কাউন্সিল অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত ৫২২টি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছে। রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ শৈশব সুস্থ কৈশোর অভিযান ৭.০-এর আওতায় ১১,৩৬,০৮৩ জন শিশু এবং বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর ও কিশোরীরা উপকৃত হয়েছে। রুটিন ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রামে মোট ২৭,৯০৮ জন শিশুকে টিকাকরণ করা হয়েছে এবং ৬,৩৩৯ জন মহিলা জননী সুরক্ষা যোজনায় উপকৃত হয়েছেন। তিনি বলেন, এবছর রাজ্যের ৭টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স স্ট্যান্ডার্ডে’র জাতীয় শংসাপত্র পেয়েছে। দয়ারামপাড়ায় এবং কাঞ্চনবাড়িতে দুটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং টাকারজলায় একটি ৩০ শয্যা বিশিষ্ট কমিউনিটি হেলথ সেন্টারের উদ্বোধন হয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ৭০ বছর ও তার বেশী বরিষ্ঠ নাগরিকদের ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হবে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং সড়ক সংযোগ উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে চলতি বছরে ১৩২ কিমি রাস্তা উন্নত করা হয়েছে এবং ৮৭৫ কিমি রাস্তার সংস্কার করা হয়েছে।
গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল প্রকল্পে ৪৪০ কিমি রাস্তা এবং ২১টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে৷ বিশেষ কেন্দ্রীয় সহায়তার আওতায় ৪৫৪ কিমি রাস্তা এবং ৫টি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতাল, আইজিএম হাসপাতাল এবং ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে কাজের তদারকি করার জন্য পূর্ত দপ্তরের মেকানিক্যাল বিভাগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে একটি নতুন সাব ডিভিশন গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্পগুলির জন্য ২,৮০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। যার মধ্যে আগরতলার পূর্ব বাইপাস এবং আমতলি থেকে ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির পর্যন্ত সড়ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা রাজ্যের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করবে। রাজ্যপাল বলেন, জলজীবন মিশনে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ৬,৩২,৩৮৭টি বাড়িতে পাইপলাইনে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে জলজীবন মিশনে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার ১০০ শতাংশ বাড়িতে পাইপলাইনে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা নিয়েছে। রাজ্যের ধলাই জেলা ২০২৩ সালে ৫ম জাতীয় জল পুরস্কারে সেরা জেলা বিভাগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে পুরস্কৃত হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে মোট চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ২,৫৫,২৪১ হেক্টর, যারমধ্যে ১,২২,২৭০ হেক্টর জমি এখন পর্যন্ত সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। সরকার 2024-25 অর্থবছরে ৩,১৫০ হেক্টর জমি নিশ্চিত সেচের আওতায় আনার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷ এই উদ্দেশ্যে ১৫০টি গভীর নলকূপ প্রকল্প, ৫টি উত্তোলক সেচ প্রকল্প, ৮টি ক্ষুদ্র সেচ স্টোরেজ প্রকল্প এবং ২টি ডাইভারশন প্রকল্প নির্মাণের কাজ চলছে। রাজ্যপাল বলেন, সবার জন্য আবাসনের সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে অনুমোদিত ১,১৫,৬৭৩টি আবাসের মধ্যে ১,০৮,৭০৩টি আবাস নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ করেছে। সম্পূর্ণতা অভিযানের আওতায় ত্রিপুরা ৬টি প্রধান সূচকের নিরিখে নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ সম্পূর্ণ করে ১০০ শতাংশ সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, দীনদয়াল অন্ত্যোদয় যোজনা-জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের আওতায় গ্রামীণ এলাকার ৪.৭৩ লক্ষ মহিলা ৫২,৩৫০টি স্বসহায়ক দল গঠনের মাধ্যমে ২,৩৭৩টি ভিলেজ অর্গানাইজেশন এবং ১৪১টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশনের সাথে যুক্ত রয়েছে। গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের জীবিকায় সহায়তা করতে স্বসহায়ক দলগুলিকে ৭৪২.৯১ কোটি টাকা কমিউনিটি ফান্ড দেওয়া হয়েছে। তারমধ্যে ৬৫.৯২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে 2024-25 বছরে। তাছাড়াও মহিলা স্বসহায়ক দলগুলি পরিচালনার জন্য ১,৪০০ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, জাতীয় পঞ্চায়েত পুরস্কার-২০২৪ ত্রিপুরা ৭টি পুরস্কার পেয়ে একটি মাইলফলক অর্জন করেছে। ন্যাশনাল ল ইউনিভার্সিটি, ত্রিপুরা, কেরালা ইনস্টিটিউট অব লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং সিপার্ডের মতো অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলির সহযোগিতায় রাজ্যের পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। রাজ্যপাল বলেন, স্মার্ট সিটি মিশনের আওতায় রাজ্যে ৬৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, এজন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮.১০ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৬০টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রূপায়িত প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ফায়ার ব্রিগেড চৌমুহনি থেকে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ উদ্যানের পুনর্নির্মাণ এবং আখাউড়ায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। তাছাড়াও শহর এলাকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার ‘মুখ্যমন্ত্রী স্যাটেলাইট টাউন ডেভেলপমেন্ট স্কিম’ এবং ‘মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্প’ চালু করেছে। এই দুটি প্রকল্পে আগামী পাঁচবছরে ১,৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হবে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার রুখিয়াতে একটি ১২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়াও সরকার রাজ্যে পাম্প স্টোরেজ বিদ্যুৎ প্রকল্প (পিএসপি) বাস্তবায়নের উদ্যোগও নিয়েছে। এনএইচপিসি লিমিটেডের সহযোগিতায় চারটি পাম্প স্টোরেজ পাওয়ার (পিএসপি) প্রকল্পের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
প্রতিটি পিএসপি প্রকল্পের প্রত্যাশিত উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৮০০ মেগাওয়াট। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে শক্তিক্ষেত্রের উন্নয়নেও নজর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যের সেকেরকোটে ৬৫৬ কোটি টাকা বিনিয়োগে ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের নতুন ডিপো নির্মানের জন্য ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। রাজ্যপাল বলেন, সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি)-এর সঙ্গে ত্রিপুরা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্রেংদেনিং অ্যান্ড জেনারেশন এফিশিয়েন্সি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই প্রকল্পে ২,২৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তাছাড়াও রাজ্যে ‘উত্তর পূর্বআঞ্চলিক বিদ্যুৎব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে, যা বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়নে ১,৮০০ কোটি টাকার বিনিয়োগে রাজ্যে একটি শক্তিশালী পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। দুর্বল জনজাতি গোষ্ঠী পরিবারের বিদ্যুতায়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার পিএম-জনমন প্রকল্পে রাজ্যে ৬৯.১২ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পিএম-সূর্যঘর : মুফত বিজলি যোজনা চালু হয়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করতে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য সরকার এবছর রাজ্যে নতুন শিল্পনীতি ঘোষণা করেছে। বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে এবং ব্যবসা স্থাপনের জন্য সহায়তা দিতে ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি অব ত্রিপুরা গঠন করা হয়েছে। উদ্যোগ সমাগম ২০২৪-এ বাণিজ্য সংস্কার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ত্রিপুরা ৩টি বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে। টাটা টেকনোলজিস লিমিটেডের সহযোগিতায় শিল্প, শিল্পেদক্ষতা বৃদ্ধি এবং নিয়োগ যোগ্যতা বৃদ্ধি করার জন্য ১৯টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসকে ৪০ শিল্প মানে উন্নত করা হচ্ছে। পিএম-বিশ্বকর্মার অধীনে ৭,৫২৩ জনকে মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মোট ২,৩৯৯টি ঋণের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে, যার মধ্যে ১,৮২২ জনকে ইতিমধ্যেই ঋণ প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা টি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (TTDC) নিলামের বাজারে গড়ে ২১৩ টাকা প্রতি কেজি দামে ফিনিশড টি বিক্রয় করেছে। রাজ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র গড়ে উঠছে৷ তাছাড়াও নতুন চালু হওয়া চিফ মিনিস্টার্স ট্রাইবেল উইভার্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২০২৪-২৫ বছরে রাজ্যের ১২,০০০ ঐতিহ্যবাহী জনজাতি তাঁত শিল্পীদের তাঁতবস্ত্র উৎপাদনের জন্য সুতা সরবরাহ করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, সরকার প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যেদক্ষতা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়েছে। এই লক্ষ্যে ই-অফিস ব্যবস্থা ১৫ মার্চ, ২০২৪-এর মধ্যে জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও বিডিও অফিসগুলিতে ১০০ শতাংশ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সরকার ত্রিপুরা স্টার্টআপ পলিসি-২০২৪ ঘোষণা করেছে। এর অধীনে রাজ্যের বেকার যুবারা ২ লক্ষ টাকার প্রাথমিক পুঁজির সুবিধা পেতে পারে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, ত্রিপুরার পর্যটন সম্ভাবনা বৃদ্ধি করার জন্য সরকার পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে উদয়পুরের জগন্নাথ দীঘিতে ওয়াটারফ্রন্ট প্রকল্প উন্নয়ন, কমলপুরের সুরমাছড়ায় নতুন পর্যটন কেন্দ্র এবং মেলাঘরের নীরমহল, কৃষ্ণসাগর দীঘিতে (জগন্নাথ দীঘি) লেজার অ্যান্ড লাইট শো ইত্যাদি৷ ইকো-ফ্রেন্ডলি পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে থাকার সুবিধা সম্প্রসারণ করতে সরকার স্বদেশ দর্শন প্রকল্পে ছবিমুড়ায় ১০টি লগহাট নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, পর্যটন পরিকাঠামোর উন্নয়নে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় এক্সটারনালি এইডেড প্রকল্পগুলির মধ্যে ১৭৯.৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি পর্যটন কেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ডম্বুর লেকে হাউস বোট চালুর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার গোমতী জেলার বনদুয়ারে শক্তিপীঠ পার্কের উন্নয়নের জন্য ৯৭.৭ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে।
বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি পরিবেশগত সুরক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, চলতি বছরে ৯,৮৫৬ হেক্টর বনাঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বাঁশ ও অন্যান্য প্রজাতির গাছের বনায়ন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় ১৭৬৫ কোটি টাকার নতুন একটি প্রকল্প ‘এলিমেন্ট’ (এনহেন্সিং ল্যান্ডস্কেপ এন্ড ইকোসিস্টেম ম্যানেজমেন্ট) বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্যে জনজাতি গোষ্ঠীর সামাজিক অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে একটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি উন্নয়ন যোজনায় ২,০৭৩ জন সুবিধাভোগীকে উপার্জনশীল কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশনের আওতায় ২৩,১৭৭ হেক্টর রাবার বাগানের জন্য ২৮,১৪৯ জন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। রাজ্যপাল বলেন, ত্রিপুরা রুরাল ইকোনমিক গ্রোথ অ্যান্ড সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্টের আওতায় ১,৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। তাছাড়া এই প্রজেক্টে ৯৫৫টি প্রডিউসার গ্রুপ এবং ৪৮টি ক্লাস্টার লেভেল ফেডারেশন গঠন করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, ধরতি আবা জনজাতীয় গ্রাম উৎকর্ষ অভিযানে ভারত সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সমন্বয় সাধন করে জনজাতি সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করা হবে। এই প্রকল্পটি রূপায়িত হবে দেশের ৬৩,৮৪৩টি গ্রামে। এর মধ্যে ত্রিপুরার ৩৯২টি গ্রাম রয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী জনজাতীয় উন্নত গ্রাম অভিযান প্রকল্পের সূচনা হয়৷ এই প্রকল্পে রাজ্যের অনেক গ্রাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, সরকার রাজ্যের তপশিলি জাতি, অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। পিএম-অনুসূচিত জাতি অভ্যুদয় যোজনায় রাজ্যের ১,৯১৫ সুবিধাভোগীকে উপার্জনশীল কাজের জন্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার দিব্যাঙ্গজন ব্যক্তিদের ইতিবাচক ক্ষমতায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। ২০২৪ সালে ত্রিপুরা রাজ্য দিব্যাঙ্গজন ক্ষমতায়ন নীতি চালু করা হয়েছে, যা একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ৷ পিএম-জনমন প্রকল্পে জনজাতি এলাকায় বিশেষ করে অবহেলিত ও দুর্বল অংশের লোকদের জন্য ৭৭টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, ভারত সরকার, ত্রিপুরা, মিজোরাম সরকার এবং ব্লু সংগঠনের মধ্যে চতুর্পাক্ষিক চুক্তির অধীনে প্রতিটি পুনর্বাসিত ব্লু পরিবারকে পাকা আবাস নির্মাণের জন্য ১.৫০ লক্ষ টাকা, এককালীন আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৪ লক্ষ টাকা, মাসিক আর্থিক সহায়তা হিসেবে ৫ হাজার টাকা এবং ২ বছরের জন্য বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। পুনর্বাসন এলাকায় উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যুবকদের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পও চলছে। রাজ্যপাল বলেন, মিজোরাম থেকে আগত ও ত্রিপুরায় পুনর্বাসিত ব্লু পরিবারগুলিকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গণবন্টন ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬,২৫০টি ব্লু পরিবারের ২২,০০০ ব্যক্তিকে গণবন্টন ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। তাছাড়াও ৬০০টি ন্যায্যমূল্যের দোকানকে আদর্শ ন্যায্যমূল্যের দোকানে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভোক্তা সচেতনতা বৃদ্ধি করতে রাজ্যে ১০০টি নির্বাচিত বিদ্যালয় ও ১৮টি মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোক্তা ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, আমার সরকার রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০২৪-২৫ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত নেশামুক্ত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে ১৪,৩৫০ কেজি গাঁজা, ৭৫,৩১৮ বোতল কফ সিরাপ, ৫,৮৩,৪৬৫টি ট্যাবলেট এবং ৭,৫২০ গ্রাম হেরোইন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মোট ৬৩,০২,৯৫৫টি গাঁজা গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত ২৬০টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং ৪২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেকার যুবাদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে ৯১৬ জন কনস্টেবল এবং ২১৮ জন সাব ইনস্পেক্টর নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
তাছাড়াও পুলিশ দপ্তরে ৬,০৬৭ জন স্পেশাল এক্সিকিউটিভ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলসের জওয়ানদের কল্যাণে আমার সরকার টিএসআর জওয়ান, রাজ্য পুলিশের সুবেদার ও ইনস্পেক্টর অব পুলিশদের রেশন মানি ভাতা এবং বার্ষিক পোশাক ভাতা বৃদ্ধি করেছে। স্পেশাল পুলিশ অফিসারদের মাসিক সাম্মানিক ভাতা ১২,০০০ টাকা এবং স্পেশাল এক্সিকিউটিভদের সাম্মানিক ভাতা ১৩,০০০ টাকা করা হয়েছে। হোমগার্ডদের মজুরি বৃদ্ধি করে মাসে ২০,০৯৭ টাকা করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে সরকার ১,৩৪৩টি চা শ্রমিক পরিবারকে ৫৩.৭২ একর জমি প্রিমিয়াম ছাড়াই বরাদ্দ করেছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যের বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত, পরিচর্যা এবং উন্নত করে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে। 2024-25 অর্থবছরে রাজ্যের নান্দনিক বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য ৫০১টি অনুষ্ঠান নিয়ে ১২২টি ইভেন্টের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে মায়ের গমন কার্নিভাল গত ১৪ অক্টোবর ২০২৪-এ তৃতীয়বারের মতো সফলভাবে আয়োজন করা হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত জেলা থেকে ৪৭টি ক্লাবকে শারদ সম্মান 2024 পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে আমার সরকার বিভিন্ন রাজ্যে যেমন আসাম ও রাজস্থানে সাংস্কৃতিক দল পাঠিয়েছে এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের সংস্কৃতি দপ্তরের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলছে। রাজ্য সরকার সাংবাদিকদের কল্যাণে সাংবাদিক কল্যাণ প্রকল্প ও সাংবাদিক পেনশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য মিডিয়ার বিশিষ্ট প্রতিনিধিদের নিয়ে মিডিয়া অ্যাডভাইজরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার রাজ্যে ক্রীড়াক্ষেত্রের সার্বিক বিকাশেও অঙ্গীকারবদ্ধ। এজন্য রাজ্যে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তাছাড়াও ক্রীড়া ক্ষেত্রের বিকাশে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ক্রীড়া উন্নয়ন প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রী স্টেট টেলেন্ট সার্চ প্রোগ্রামে প্রতিভাবান মহিলা ক্রীড়াবিদদের এককালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পদকজয়ী ক্রীড়াবিদ ও প্রশিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিভাশালী পুরস্কার প্রকল্পে আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী স্পোর্টস ডেভেলপমেন্ট স্কিমে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যবীমারও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকার ‘জাগো যুবা শক্তি’ স্লোগানে বিশ্বাস করে৷ তিনি বলেন, সরকার এক স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃস্টি করতেও অঙ্গীকারবদ্ধ। সম্প্ৰতি জেআরবিটি’র মাধ্যমে ২৪১০ জন প্রার্থীকে চাকুরিতে নিযুক্তি দিয়েছে। তাছাড়াও সরকার দক্ষতা উন্নয়ন এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে বেকার যুবাদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, সমবায় ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে সমবায় মন্ত্রক রাজ্যের ৮টি প্যাক্সকে চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে গোমতী জেলার খিলপাড়া প্যাক্সের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিধানসভায় রাজ্যপাল বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, গত ১৯-২৩ আগস্ট প্রবল বৃষ্টিপাত ও ভূমি ধুসের ফলে ৩৮ জন নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। ৩.৭ লক্ষ মানুষকে বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল৷ বিধানসভায় রাজ্যপাল বন্যা ও ভূমি ধ্বসে নিহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, এই বন্যায় কৃষি পরিকাঠামো ও জীবিকা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪,২৪৭ কোটি টাকার বেশী। এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যসরকার এসডিআরএফ, এনডিআরএফ, ইন্ডিয়ার এয়ারফোর্স, রাজ্যের সরকারি আধিকারিক ও স্বেচ্ছাসেবীদের মোতায়েন করেছিল। রাজ্যে ৮৮৯টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল, যেখানে বন্যা দুর্গতদের আশ্রয় ছাড়াও খাদ্য ও চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়েছে৷ পরিশেষে রাজ্যপাল ইন্দ্ৰসেনা রেড্ডি নান্নু রাজ্যের উন্নতির লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করার জন্য বিধানসভার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।