অনলাইন ডেস্ক, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪: ভারতীয় রাজনীতিতে অটল বিহারী বাজপেয়ী ছিলেন ভীষ্মপ্রতীম এক আদর্শ পুরুষ। যিনি দেশের গ্রামীণ মানুষের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নের জন্য অন্ত্যোদয় যোজনা চালু করেছিলেন। যার সুফল ভোগ করছেন এখন গোটা দেশের মানুষ৷ শৈবতীর্থ কৈলাসহরের ঊনকোটি কলাক্ষেত্রে আজ দু’দিনব্যাপী দ্বিতীয় অটল কবিতা ও সাহিত্য উৎসব-২০২৪ এর উদ্বোধন করে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায় একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে ক্রীড়ামন্ত্রী বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর কবি প্রতিভাও ছিল অনন্য। তিনি তাঁর কবিতার মধ্য দিয়ে এক সুন্দর ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন৷ অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী হন তখন দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এক নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রদর্শিত পথেই এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত প্রতিষ্ঠার দিকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, দু’দিনব্যাপী এই অটল কবিতা ও সাহিত্য উৎসব ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর উনকোটি কলাক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত হবে৷ উৎসবে দু’দিন বহুভাষী কবিতা পাঠ এবং দ্বিতীয় দিন সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে অটলবিহারী বাজপেয়ী আজীবন স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন কবি মিলন কান্তি দত্ত৷ পুরস্কার স্বরূপ কবিকে শাল চাদর, ১ লক্ষ টাকা ও মানপত্র দেওয়া হয়৷
অনুষ্ঠানে ক্রীড়ামন্ত্রী আরও বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী শুধুমাত্র গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশই নয়, সর্বশিক্ষা প্রকল্পের মধ্য দিয়ে গ্রামস্তরেও শিক্ষাকে সম্প্রসারণ করতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন।
দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার সাথে শহরকে যুক্ত করতে চতুর্ভুজ যোজনা প্রণয়ন করেছিলেন। অটল কবিতা ও সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তপশিলি জাতি কল্যাণমন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী আমাদের এক অনুপ্রেরণার নাম৷ তাঁর জীবন আমাদের কাছে এক গৌরবময় ইতিহাস৷ এই গৌরবময় ইতিহাসকে পাথেয় করে আমাদের আগামীদিনে এগিয়ে যেতে হবে৷ তিনি বলেন, রাজনীতিতে নীতি ও নৈতিকতা কি তা আমাদের শিখিয়েছেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অবিস্মরণীয়।
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসাম থেকে আগত সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত দিগন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, আমাদের কৈশোর ও যৌবনের অনুপ্রেরণার কবি ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন ধারা সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর কবিতা থেকে যে রসবোধ পাওয়া যায় তা নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে। অনুষ্ঠানে রাজ্যের সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত কবি এস গম্ভীনি বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রনেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী সম্পর্কে আলোচনা এই রাজ্যে যতটা হয়েছে তার চাইতে অনেক কম আলোচিত হয়েছে তাঁর কবিতাগুলি নিয়ে।
তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এই উৎসবের মধ্য দিয়ে এই ঘাটতিকে পূরণ করছে। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্য সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী একাধারে ছিলেন সমাজসেবী, কবি, রাজনীতিবিদ। ভারতীয় রাজনীতিতে অটলবিহারী বাজপেয়ীকে বলা হয় ভীষ্ম স্বরূপ। অনুষ্ঠানে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত দিগন্ত বিশ্বশর্মা ও এস গম্ভীনিকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। তাছাড়াও অটলবিহারী বাজপেয়ীর জীবনের উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকার উদ্বোধন করেন ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়।
অনুষ্ঠানে ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায় কবি মনোজিৎ ধরের লেখা অটলবিহারী বাজপেয়ীর বইয়ের অনুবাদ গ্রন্থের উদ্বোধন করেন৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য বলেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী যেমন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন তেমনি ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও বাগ্মী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উনকোটি জিলা পরিষদের সভাধিপতি অমলেন্দু দাস। উপস্থিত ছিলেন কৈলাসহর পুরপরিষদের চেয়ারপার্সন চপলা রাণী দেবরায় ও ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা।
দু’দিনব্যাপী এই উৎসবে কবি সম্মেলনে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত লেখিকা চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, আসাম থেকে আগত অঙ্কুর রঞ্জন ফোকন, অরুণাচলপ্রদেশ থেকে আগত ডেঞ্জিয়া অন্তরা ও চারু মনি৷ দু’দিনব্যাপী এই উৎসবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবি ও সাহিত্যিকরা উপস্থিত হয়েছেন। বহুভাষী কবিতা পাঠে অংশ নেবেন বাংলা, ককবরক, মণিপুরী, চাকমা ভাষার কবিরা। উৎসবের অঙ্গ হিসেবে গতকাল কৈলাসহর পুর এলাকায় একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে৷ আগামীকাল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে বহুভাষী কবিতা পাঠের পাশাপাশি সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে৷