রাজ্যের বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও বিকশিত ত্রিপুরা গড়ে তোলা : মুখ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪: রাজ্যের বর্তমান সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের সার্বিক কল্যাণ ও বিকশিত ত্রিপুরা গড়ে তোলা৷ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সর্বাত্মক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। আজ বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজ্যের উন্নয়নের বিষয়ে যখনই কোন প্রয়োজন হয়েছে তখনই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের জনগণের কল্যাণে উদার মানসিকতা নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। গত আগস্ট মাসের রাজ্যের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যের নাগরিকদের সহযোগিতায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এই ভয়াবহ বিপর্যয় পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।
এজন্য মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মচারি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং দলমত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে রাজ্যে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে। মহিলাদের উপর সংঘটিত অপরাধ গত বছরের তুলনায় ৮.৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রাজ্যে এন্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট চালু করা হয়েছে৷ গত ৩ বছরে রাজ্যের বিভিন্ন থানায় এনডিপিএস সংক্রান্ত ১,৬৬৫টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২,৬৯৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছর মোট ৮৬৭ কোটি ৪৩ লক্ষ ৫২ হাজার ৭৬৩ টাকার নেশাসামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের ক্ষমতায়ণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে।
গত বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। মহিলাদের টিএসআর ব্যাটেলিয়ানে জওয়ান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। সরকারি চাকুরিতে ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে ৯টি মহিলা থানা চালু করা হয়েছে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে বর্তমানে ৯১,৮৭১ জন লাখপতি দিদি রয়েছেন। রাজ্যের স্বসহায়ক দলের দিদিদের সশক্ত করতে সরকার ৭৪৬.৮ কোটি টাকার ফান্ড প্রদান করেছে। ২০১৮ সালের পর ১৪৬৫.৮১ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক লোন দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে৷ ফলে রাজ্যের রোগীদের চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার প্রবণতা এবং প্রয়োজনীয়তা অনেক কমেছে৷ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পরিকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পরিষেবার ক্ষেত্রটিও উন্নত হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাতি গোষ্ঠীর সামাজিক অর্থনৈতিক, শিক্ষাগত এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে একটি অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জনজাতি উন্নয়ন যোজনায় ২,০৭৩ জন সুবিধাভোগীকে উপার্জনশীল কাজ হাতে নেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশনে ২৩,১৭৭ হেক্টর রাবার বাগানের জন্য ২৮, ১৪৯ জন সুবিধাভোগী উপকৃত হয়েছেন। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যপালের ভাষণে সরকারি উদ্যোগ, নীতি ও কর্মসূচি প্রতিফলিত হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে যেসকল কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিস্তারিত আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ‘মুখ্যমন্ত্রী স্যাটেলাইট টাউন ডেভেলপমেন্ট স্কিম’ এবং ‘মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্প’ চালু করেছে৷ যার জন্য আগামী ৫ বছরে ১,৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করা হবে৷ রাজ্যের শিল্প ও পরিষেবার ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করতে নতুন শিল্প নীতি ঘোষণা করেছে। বিনিয়োগ ও ব্যবসা স্থাপনের জন্য সহায়তা দিতে আই-প্যাট গঠন করা হয়েছে। রাজ্যে উত্তরপূর্ব ভারতের তৃতীয় এবং রাজ্যের জন্য প্রথম চা নিলাম কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্থর কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। টাটা টেকনোলজিস লিমিটেডের সহযোগিতায় ১৯টি আইটিআই-এর উন্নয়ন করা হচ্ছে। ত্রিপুরা রাজ্য পর্যটন শিল্পে প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, উন্নয়নের প্রধান শর্তই হচ্ছে শান্তি। গত ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ভারত সরকার, এনএলএফটি ও এটিটিএফ’র সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রীয় জনজাতি সম্প্রদায়ের উন্নয়নে ২৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ অনুমোদন হয়েছে৷ তাছাড়াও তিনি মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যেসকল উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা রাজ্যপালের ভাষণের উপর বিরোধী দলের সদস্যদের আনা সংশোধনী প্রস্তাবের বিরোধীতা করে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন বিধানসভায় আজ রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের সমর্থনে পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, রাজ্যপালের ভাষণে রাজ্যের এগিয়ে চলার সুস্পষ্ট প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সালে যে পরিমাণ পর্যটক এসেছিল তার থেকে ৬ লক্ষাধিক পর্যটক গত ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত রাজ্যে এসেছেন। বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রাণীসম্পদ বিকাশ ও মৎস্যমন্ত্রী শুধাংশু দাস বলেন, প্রাণীপালক এবং বেকারদের পশুপালনে উৎসাহিত করতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজ্যে প্রাণীপালন সম্মান নিধি চালু করা হয়েছে৷ এতে রাজ্যে ৫ হাজার প্রাণীপালককে বছরে ৬০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গ দর্শনে রাজ্যে বহুমুখী উন্নয়নের কাজ এগিয়ে চলছে। রাজ্যপালের ভাষণে তারই প্রতিফলন ঘটেছে৷
বিধানসভায় আজ রাজ্যপালের ভাষণের উপর আনা ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক জীতেন্দ্র মজুমদার, বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব, বিধায়ক শম্ভুলাল চাকমা বিরোধীদের আনা সংশোধনী প্রস্তাবের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়, বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস, বিধায়ক ইসলামউদ্দীন, বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী, বিধায়ক রামু দাস, বিধায়ক অশোক চন্দ্র মিত্র, বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন, বিধায়ক সুদীপ সরকার, বিধায়ক নয়ন সরকার, বিধায়ক শৈলেন্দ্র চন্দ্র নাথ৷ সভা শেষে রাজ্যপালের ভাষণের উপর পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ কর্তৃক আনিত ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবটি ধুনী ভোটে গৃহীত হয় এবং বিরোধীদের আনা সংশোধনী প্রস্তাব বাতিল করা হয়।
Recent Posts