অনলাইন ডেস্ক, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৫: জনগণের সার্বিক সুরক্ষা প্রদানে ত্রিপুরা পুলিশ দায়বদ্ধভাবে কাজ করে চলছে। তাই পুলিশকে সত্যনিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকতে হবে৷ পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বিভিন্ন অপরাধের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। আজ অরুন্ধতীনগরস্থিত মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে ত্রিপুরা পুলিশ সপ্তাহ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে টিএসআর, ত্রিপুরা পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের জওয়ানরা কুজকাওয়াজ প্রদর্শনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ তাই ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সামগ্রিক অপরাধ ১৯.৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২৮টি রাজ্যের মধ্যে সর্বনিম্ন অপরাধের হারের নিরিখে ত্রিপুরা তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
এনসিআরবি’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী শারীরিক আক্রমন এবং নারী সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরার স্থান হচ্ছে সর্বনিম্ন দিক থেকে অষ্টম৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 2024 সালে ত্রিপুরায় গত ১০ বছরে সবচেয়ে কম অপরাধের পরিসংখ্যান রয়েছে। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত লোকসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশ প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন পরিচালনা ও সম্পন্ন করার জন্য ত্রিপুরা পুলিশ নির্বাচন কমিশন দ্বারা প্রশংসিতও হয়েছিল।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ হলো অসহায় মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার অন্যতম প্রধান ভরসাস্থল। ২০২৪ সালে সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ ৪৫ শতাংশ, শারীরিক অপরাধ ৩৮ শতাংশ, দাঙ্গা ৭৫ শতাংশ, আঘাত ও হামলা ৩৭.২ শতাংশ এবং মহিলাদের উপর অপরাধ ৫৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জম্পুইজলায় ৭ম ব্যাটেলিয়ান টিএসআর হেড কোয়ার্টারে ১১৭৩ জন এনএলএফটি এবং এটিটিএফ সদস্য অস্ত্র সমর্পণের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন৷
এরফলে ত্রিপুরাকে একটি সন্ত্রাসবাদ মুক্ত রাজ্য বলা যেতে পারে৷ নেশামুক্ত ত্রিপুরা অভিযানে নেশা বিরোধী কার্যকলাপে ত্রিপুরা পুলিশ কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করছে। গত তিন বছরে এনডিপিএস মামলায় ১৬৬৬টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে এবং ৩০৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রায় ৮৬৭ কোটি টাকা মূল্যের নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ১০৬ শতাংশ বেশী।
নেশামুক্ত ত্রিপুরা অভিযানের অঙ্গ হিসাবে এবং বেআইনী গাঁজা চাষ ও পাচার বন্ধ করতে ত্রিপুরা পুলিশ অন্যান্য বাহিনী / এজেন্সীগুলির সহায়তায় ২০২৪ সালে প্রায় ১.৬৪ কোটি গাঁজা চারা ও গাছ ধ্বংস করেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় যা ১৩২ শতাংশ বেশী। এছাড়াও গত তিন বছরে ১,৫৮৬ কোটি টাকা মূল্যের নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং গাঁজার চারা ও গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন বাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও বেআইনীভাবে যেসব বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা শরণার্থী ও অন্যান্য বিদেশী নাগরিক অনুপ্রবেশ করছে ত্রিপুরা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে৷
২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশী অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নথীভুক্ত মামলা ১৮ শতাংশ এবং গ্রেপ্তার ৩৬.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সাইবার সংক্রান্ত অপরাধের বিরুদ্ধে গত এক বছরে ত্রিপুরা পুলিশ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২.৮৬ কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ১৭.৬১ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর ইমার্জেন্সি রেসপন্স সাপোর্ট সিস্টেম (ERSS) প্রকল্পে রাজ্যব্যাপী ইমার্জেন্সি নম্বর ‘১১২’ চালু করা হয়েছে৷
রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যায় ৭৬৫ জন টিএসআর কর্মীর সমন্বয়ে ৫৩টি টিএসআর দল ৬২০০ এর বেশী বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করে এবং ৫১টি স্থানের ভূমিধস সারাই করেন। এছাড়াও বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারকার্যে ৩৮৪টি জায়গায় জেলা পুলিশের ১০৯টি দল নিয়োজিত ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার সম্প্রতি ত্রিপুরা পুলিশ ও টিএসআর জওয়ানদের রেশনমানি, ডিএ এবং ইউনিফর্ম অ্যালাউন্স বৃদ্ধি করেছে। এসপিও এবং স্পেশাল এক্সিকিউটিভদের সাম্মানিক ভাতা বাড়িয়ে যথাক্রমে ১২ হাজার এবং ১৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। নতুন তিনটি ফৌজদারী আইনের বিষয়ে ত্রিপুরা পুলিশের ৫০০০ এর বেশী কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
আগামী বছরগুলিতে নতুন থানা, ফাঁড়ি, জিআরপিএস, সাইবার পুলিশ স্টেশন ইত্যাদি ব্যবস্থাকে আরও প্রসারিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে সরকার৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। ২০২৪ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন তাদের আজ পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয়। এরমধ্যে লাইফটাইম অ্যাচিভার পুরস্কার পেয়েছেন প্রাক্তন পুলিশ অফিসার কাজল ঘোষ, টিএসআরের শ্রেষ্ঠ ক্লার্ক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন নায়েক সুবেদার বিপুল কারজি, সিভিল পুলিশ ইউনিটের শ্রেষ্ঠ ক্লার্ক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন হেড ক্লার্ক উত্তম বিশ্বাস, ২০২৪ সালের শ্রেষ্ঠ তদন্তকারি অফিসার হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন সাব-ইনস্পেক্টর সঞ্জয় মজুমদার, পুলিশ ম্যান অব দ্যা ইয়ার হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন অ্যাডিশনাল এস পি ধ্রুব নাথ, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানা, বীট ব্যবস্থার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে কমলপুর থানা, ২০২৪ সালের শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে যুগ্মভাবে পুরস্কার পেয়েছে বীরগঞ্জ থানা ও দামছড়া থানা।
বীট ব্যবস্থার ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে ধলাই জেলা, প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা পুলিশের শ্রেষ্ঠ ইউনিট হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং অ্যাকাডেমি, শ্রেষ্ঠ টিএসআর ব্যাটেলিয়ান হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে তৃতীয় ব্যাটেলিয়ান। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা পুরস্কার প্রাপকদের হাতে ট্রফি ও শংসাপত্র তুলে দেন। এছাড়াও কর্তব্য পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এমন দুজন পুলিশ কর্মীর পরিবারের হাতে আর্থিক সম্মাননা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ অনুষ্ঠানে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী প্রমুখ।