অনলাইন ডেস্ক, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪: ত্রিপুরা রাজ্যের পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, ব্লক ও পঞ্চায়েতের সুষ্ঠু কার্যক্রমের ফলে ত্রিপুরা এই প্রথমবার জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ পুরস্কারে সাতটি বিভাগে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছে। এই সম্মান রাজ্যের জন্য যেমন গর্বের তেমনি শক্তিশালী পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার প্রতি এক স্বীকৃতিও বটে। আগামী ১১ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই পুরস্কারসমূহ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেবেন।
প্রায় ২.৫ লক্ষ পঞ্চায়েতের মধ্যে প্রতিযোগিতা করে রাজ্যের এই সাফল্য অর্জন উন্নয়ন ও সুশাসনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ পুরস্কারের মধ্যে ত্রিপুরার গোমতী জেলা দেশের মধ্যে সেরা জেলা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। এই সম্মান অর্জনের জন্য গোমতী জেলা পাবে ৫ কোটি টাকার পুরস্কার। পরিকল্পিত উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক পরিকাঠামো উন্নত করার ক্ষেত্রে গোমতী জেলা অন্যদের ছাপিয়ে গেছে।
অমরপুর আরডি ব্লক জাতীয় স্তরে দ্বিতীয় সেরা ব্লকের শিরোপা অর্জন করেছে। ব্লকের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, গ্রামীণ সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণে তাদের দক্ষতা এই সাফল্য অর্জনে সহায়ক হয়েছে। পুরস্কার মূল্য হিসেবে তারা পাবে ১ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। মহিলা ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে রূপাইছড়ি ব্লকের মনুবনকুল ভিলেজ কমিটি দেশের সেরা মহিলা বান্ধব পঞ্চায়েত হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।
নারীদের জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে তাদের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। এ জন্য তারা পাবে ১ কোটি টাকার পুরস্কার। গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ ও শক্তি ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে অমরপুর আরডি ব্লকের থাকছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত। তারা সারা দেশের মধ্যে গ্রাম উর্যা ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে এবং পাবে ৭৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার।
কুমারঘাট ব্লকের বেতছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত দারিদ্র্য দূরীকরণে অসাধারণ অবদান রেখেছে। তাদের উদ্ভাবনী প্রকল্প এবং সমবায়ভিত্তিক উদ্যোগগুলির মাধ্যমে এই সাফল্য এসেছে। পুরস্কার মূল্য হিসেবে তারা পাবে ৫০ লক্ষ টাকা। অমরপুর ব্লকের রাজকাঙ ভিলেজ কমিটি শিশুদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তারা সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করে ৫০ লক্ষ টাকার পুরস্কার লাভ করেছে।
জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শন করেছে অমরপুর ব্লকের দেববাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত। গ্রামীণ অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ ও জল সংরক্ষণ প্রকল্পে তাদের সাফল্যের জন্য তারা তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে এবং পুরস্কার মূল্য হিসেবে পেয়েছে ৫০ লক্ষ টাকা। ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, ব্লক ও পঞ্চায়েত মিলিয়ে এই বছর মোট ১০ কোটি টাকার পুরস্কার জিতেছে। এই অর্থ আরও উন্নয়নমূলক কাজে ব্যবহৃত হবে, যা রাজ্যের পঞ্চায়েতি ব্যবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে প্রণীত বিভিন্ন নির্দেশিকা এবং তার কার্যকর বাস্তবায়নই এই সাফল্যের মূলে রয়েছে। জেলা, ব্লক এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের সুষ্ঠু সমন্বয় এবং দক্ষ নেতৃত্ব এই পুরস্কার অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থার এই সাফল্য রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। প্রত্যাশা করা যায় যে অন্যান্য জেলা ও ব্লকগুলিও একইভাবে সাফল্যের পথে আগামীদিনে অগ্রসর হবে।
এই সাফল্য ত্রিপুরার উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ত্রিপুরার এই পুরস্কার প্রমাণ করেছে যে, সঠিক দিকনির্দেশনা, উদ্যোগ, এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা দিয়ে রাজ্যের প্রতিটি পঞ্চায়েত জাতীয় স্তরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এই সাফল্য রাজ্যের উন্নয়নের গতিকে আরও ত্বরান্বিত করবে। পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানিয়েছেন।