সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ত্রিপুরার আর্থিক ব্যবস্থাপনা প্রশংসার দাবি রাখে

অনলাইন ডেস্ক, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫ : ত্রিপুরার আর্থিক ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। এটা নিশ্চিতভাবেই প্রশংসার দাবি রাখে। আজ দুপুরে রাজ্য সরকারি অতিথিশালায় আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. অরবিন্দ পানাগড়িয়া একথা বলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতির প্রশংসা করে বলেন, এটা নিশ্চিতভাবেই একটা রাজ্যের পক্ষে ভালো লক্ষণ৷

তিনি জানান, আজ সকালে সচিবালয়ে এক বৈঠকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি দাওয়া সম্পর্কিত একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান ড. পানাগড়িয়া জানান, কমিশন তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করার আগে বিভিন্ন রাজ্য সরকার, স্থানীয় নগর এবং গ্রামীণ সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করে তাদের অভিমত জানতে চাইবে৷

ইতিমধ্যেই কমিশন রাজ্যগুলি সফর শুরু করেছে এবং ত্রিপুরার পর আরও ১১টি রাজ্য সফরে তারা যাবেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও যে কেউ ষোড়শ অর্থ কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে তারা তাদের অভিমত জানাতে পারবেন। রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে বৈঠক করা ছাড়াও কমিশন কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গেও কথা বলবে৷ প্রথা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কমিশনের কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের স্মারকলিপি পেশ করবেন। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে কমিশন তাদের রিপোর্ট দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে৷

তিনি জানান, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় করের ৪১ শতাংশ অর্থ রাজ্যগুলিকে দেওয়া হচ্ছে এবং ৫৯ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার নিজের হাতে রাখছে। এবার অধিকাংশ রাজ্য রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রীয় করের পরিমাণ ৪১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে। আজ ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকেও এই পরিমাণ ৪১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ করার দাবি জানানো হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে দেশের অন্য অংশের তুলনায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে কিনা

জানতে চাওয়া হলে কমিশনের চেয়ারম্যান ড. পানাগড়িয়া বলেন, কমিশন উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত রয়েছে৷ এই বিষয়ে শুধু উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিই নয়, হিমাচলপ্রদেশ, উত্তরাখন্ডের মতো রাজ্যগুলির অবস্থাও পূর্বোত্তরের রাজ্যগুলির মতোই। এই বিষয়গুলির দিকে লক্ষ্য রেখেই কমিশন তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ তিনি বলেন, গড় মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা জাতীয় গড়ের নীচে থাকলেও দ্রুত রাজ্য এ ব্যাপারে উন্নতিসাধন করছে। কমিশনের নজরেও বিষয়টি রয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, বিপর্যয় মোকাবিলার বিষয়টিও কমিশনের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে অনুষ্ঠিত আজকের বৈঠকে গত আগস্ট মাসে রাজ্যের ভয়াবহ বন্যার বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। দক্ষতার সঙ্গে রাজ্য সরকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে বলে চেয়ারম্যান ড. পানাগড়িয়া অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দের সময় কিছু বিশেষ বিষয়কে বিবেচনা করা হয়। কোনও কোনও সময় রাজ্যের বিশেষ সমস্যাকে বিবেচনা করা হয়, আবার কোনও কোনও সময় ক্ষেত্রভিত্তিক গুরুত্বও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সাংবাদিক সম্মেলনে ষোড়শ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, রিপোর্ট তৈরির সময় পূর্ববর্তী অর্থ কমিশনের সুপারিশকেও ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, পঞ্চদশ অর্থ কমিশন জনসংখ্যার নিরিখে ১৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছিলো। এবার ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে বন এলাকার ভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সুপারিশকৃত ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কেননা ত্রিপুরায় বিশাল বন এলাকা রয়েছে৷ তিনি বলেন, সাধারণত সমস্ত অর্থ কমিশনের লক্ষ্য থাকে রাজ্যগুলি সমভাবে আর্থসামাজিক অগ্রগতি করতে যাতে সক্ষম হয় সেদিকে সাহায্য করা। তাই তুলনামূলকভাবে আর্থিকভাবে দুর্বল রাজ্যগুলিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় কোনও কোনও ক্ষেত্রে। এবার ত্রিপুরার পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব এসেছে এতে দুটি নতুন বিষয় বিবেচনার জন্য উত্থাপন করা হয়েছে।

বিষয়গুলি হচ্ছে ১) পরিকাঠামোগত উন্নয়নকে ৫ শতাংশ গুরুত্ব দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে এমন ক্ষেত্রে আরও ৫ শতাংশ গুরুত্ব দেওয়া, যা আগে কখনও করা হয়নি৷ সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যান ছাড়াও অর্থ কমিশনের সদস্য সৌম্যকান্তি ঘোষ, এনি জর্জ মেথিউ, মনোজ পান্ডা এবং অজয় নারায়ণ ঝা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে৷ এছাড়াও তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তীও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Recent Posts