অনলাইন ডেস্ক,২২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫: পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) চালু হওয়ার পর থেকে দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষ থেকে রাজ্যেও জিএসটি সংগ্রহ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে জিএসটি সংগ্রহ ৫১০ কোটি টাকার উপরে পৌঁছেছে। একইসঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড জিএসটি সেটেলমেন্টও ১ হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। সরকারের কার্যকর নীতি, দক্ষ প্রশাসন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।
আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের ট্যাক্সেস অর্গানাইজেশন আয়োজিত জিএসটি সচেতনতামূলক অভিযানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত কর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই অঙ্গ হিসেবে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ত্রিপুরা রোড ডেভেলপমেন্ট সেস চালু করা হয়েছিল, যা রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এই সেস সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ২৭.৭৫ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বেড়ে ৩৭৪.৫২ কোটি টাকা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৯ সালের অক্টোবরে ত্রিপুরা ইলেক্ট্রিসিটি ডিউটি চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, এআই ভিত্তিক অ্যানালিটিক টুল চালুর ফলে জিএসটিতে জালিয়াতি সনাক্তকরণ অনেক ক্ষেত্রে সহজতর হয়েছে। পাশাপাশি ট্যাক্স ইন্টিলিজেন্স ইউনিট এখন সন্দেহজনক কার্যক্রম যেমন ভূয়া নিবন্ধন ও সার্কুলার ট্রেন্ডিং-এর উপর সক্রিয়ভাবে নজরদারি রাখছে।
কর দপ্তরের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ট্যাক্সেস, স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিসার এবং প্রোগ্রামারের মতো নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জিএসটি জ্ঞান কেন্দ্র চালু হওয়ার ফলে করদাতাদের ট্যাক্স ফাইলিং করা সহজতর হবে। তাছাড়া চ্যাটবট সুবিধা চালুর ফলে করদাতা, আধিকারিক এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিএসটি চালুর ফলে প্রাথমিকভাবে কর প্রদান প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার মতো কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছিল।
কোভিড- ১৯ অতিমারির কারণেও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের ফলে ত্রিপুরা রোড ডেভেলপমেন্ট সেস এর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সেস রাজস্ব ৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যের আবগারি রাজস্ব ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে একাধিক সংস্কার করা হয়েছে।
ফার্স্ট পয়েন্ট টেক্সেশান সিস্টেম, ই-আবগারি পোর্টাল ইত্যাদি একাধিক উদ্যোগ গ্রহণের ফলে কর ব্যবস্থাপনা সহজ হয়েছে। করদাতাদের ডিজিটাল বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং কর ফাঁকি রোধে ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, জিএসটি চালু হওয়ায় রাজ্যে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং কর বৃদ্ধি প্রতিফলিত হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বিভিন্ন কর খাতে রাজ্যে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি কর আদায় হয়েছে।
কর প্রদানকারী জনগণের সঙ্গে সরকার একত্রিত হয়ে কাজ করার ফলেই রাজ্যে কর আদায়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। কর ব্যবস্থাকে সহজতর করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জিএসটি জ্ঞান কেন্দ্র, মিশন জিরো ফেক রেজিস্ট্রেশান, কর সাথী পোর্টাল চালু জনগণ ও করদাতাদের সহায়ক হবে। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, অর্থ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজ্য ট্যাক্স চিফ কমিশনার বিবেক এইচ বি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জিএসটি জ্ঞান কেন্দ্রের উদ্বোধন এবং জিরো ফেক রেজিস্ট্রেশান মিশন-এর সূচনা করেন। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় ট্যাক্সেস অর্গানাইজেশনের নতুন প্রতীকের উন্মোচন এবং মুখ্যসচিব জে কে সিনহা এআই চালিত চ্যাটবট ‘কর সাথী’র সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত বিশিষ্ট করদাতাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাছাড়া শ্রেষ্ঠ পারফর্মিং চার্জ এবং কর আধিকারিকদেরও সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী সহ অতিথিগণ তাদের হাতে স্মারক উপহার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ট্যাক্সেস অর্গানাইজেশনের কর্মকান্ড সম্বলিত একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন অ্যাডিশনাল কমিশনার অব স্টেট ট্যাক্সেস এল রাখল।