সারা রাজ্যে ব্যাপকভাবে নেশা বিরোধী অভিযান চলছে : মুখ্যমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৪: সারা রাজ্যে ব্যাপকভাবে নেশা বিরোধী অভিযান চলছে। গাঁজা, কফসিরাপ, নেশার টেবলেট, হেরোইন প্রচুর পরিমাণে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে গাঁজা গাছ ধ্বংস করছে। সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি, সহযোগী ও নেশাদ্রব্য পাচারকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত তিন বছরে রাজ্যে এনডিপিএস-এ ১,৬৬৫টি মামলা বিভিন্ন থানায় নথিভুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ২,৬৯৭ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ আজ বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে জনস্বার্থে আনা একটি দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।

বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস এবং বিধায়ক নয়ন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশটি ছিল ‘নেশামুক্ত রাজ্য গঠনে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে’। এবিষয়ে জবাব দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত তিন বছরে (২০২২-২৪) রাজ্য পুলিশ ১,৫৪,৬৫৮ কেজি গাঁজা বাজেয়াপ্ত করেছে৷ কফসিরাপ (বোতল) বাজেয়াপ্ত করেছে ৫,৮২,১০০টি। ট্যাবলেট বাজেয়াপ্ত করেছে ২৫,৬২,৭৯১টি। হেরোইন বাজেয়াপ্ত করেছে ৩৪,৯৭, ১৩৪ গ্রাম৷

এই সময়ের মধ্যে গাঁজা গাছের চারা ধ্বংস করা হয়েছে ২,৪৫,৯১,২৫৮টি। মুখ্যমন্ত্রী জানান, গাড়ি সহ বাজেয়াপ্ত নেশাসামগ্রীর বাজার মূল্য ১,৫৮৭ কোটি ৪৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৭৬২ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানান, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় এবং ক্ষমতায়ণ মন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর, স্বরাষ্ট্র দপ্তর, শিক্ষা দপ্তর, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর এবং নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো ও বিভিন্ন এনজিও-দের সহায়তায় একটি রাজ্যভিত্তিক নেশামুক্ত ভারত ক্যাম্পেইন কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ অনুরূপভাবে জেলা পর্যায়েও কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো নেশা পরিস্থিতির মূল্যায়ণ করা ও তার প্রতিরোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

খেলো ত্রিপুরা, সুস্থ ত্রিপুরা প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের প্রতিটি ব্লক, মহকুমা, জেলা, পুরসভা, নগরপঞ্চায়েত এবং ক্লাবগুলিতে নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। ত্রিপুরা স্টেট এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি নিয়মিতভাবে বিভিন্ন নেশা বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে৷ ভাটি অভয়নগর, কুমারঘাট, কৈলাসহর, দামছড়া, আমবাসা, জিরানীয়া ও জম্পুইতে ওএসটি সেন্টার চালু করা হয়েছে৷ নরসিংগড়স্থিত আধুনিক মানসিক হাসপাতালে ড্রাগ ট্রিটমেন্ট ক্লিনিক নামে একটি ডেডিকেটেড ওপিডি খোলা হয়েছে।

বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী জানান, জাতীয় স্বাস্থ্যমিশন ত্রিপুরার উদ্যোগে নেশামুক্ত ত্রিপুরা প্রচারাভিযান চলছে। এনএসএস ত্রিপুরা শাখা এই অভিযানে ২২টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে মাদকাশক্তি বিষয়ে মেগা সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছে। এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে কাউন্সিলিং এবং পরীক্ষার জন্য ২৪টি হাসপাতালে ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার, ১৩৩টি হাসপাতালে ফেসিলিটি ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এবং টেস্টিং সেন্টার, ৩টি পিপিপি-এইসিটিসি এবং একটি ভ্রাম্যমান ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সিলিং এন্ড টেস্টিং সেন্টার ভ্যান কাজ করছে৷

ন্যাশনাল এইডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে রাজ্যে ১০১২৬ জন এইচআইভি আক্রান্ত রোগী ছিল। ২০১৫-১৬ সাল থেকে ২০২৩-২৪ সাল পর্যন্ত এইডস সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৫২ জন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, শিক্ষা দপ্তর স্বরাষ্ট্র দপ্তর, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তর, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তর, পঞ্চায়েত দপ্তর, নগর উন্নয়ন দপ্তর, জনজাতি কল্যাণ দপ্তর, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর, পরিবহণ দপ্তর, শ্রমদপ্তর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেশাবিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে৷

এই কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে যুক্ত করা হচ্ছে। এভাবেই মাদক ব্যবহারের প্রবণতা হ্রাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তার সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে রাজ্যের মানুষ শান্তির পরিবেশে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন। দৃষ্টি আকর্ষনী নোটিশের উপরে আলোচনায় অংশ নেন বিরোধী দলনেতা জীতেন্দ্ৰ চৌধুরী, সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক বিধায়ক কল্যাণী সাহা রায় ও বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ।

Recent Posts

বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের উপর ধন্যবাদসূচক প্রস্তাবের উপর আলোচনা, রাজ্যের অন্তিম জনপদ ও প্রান্তিক মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নই বর্তমান সরকারের প্রধান লক্ষ্য : পরিষদীয় মন্ত্রী