অনলাইন ডেস্ক, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪: রাজ্যে যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়াক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে৷ দেশের অন্যান্য উন্নত রাজ্যের মত ত্রিপুরাতেও উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা।
আজ উদয়পুরের রমেশ ইংলিশ মিডিয়াম উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ৭টি প্রকল্পের শিলান্যাস ও ভার্চুয়ালি গামারিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের দ্বারোদঘাটন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পরামর্শেই রাজ্যে আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকার বাজেটের প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে এখন ৯টি বিষয়ে সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে৷ ইতিমধ্যেই ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে৷
রাজ্যে এখন কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে। আগামীদিনে জিবি হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপনেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আজ উদয়পুরে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে উদয়পুর পুর পরিষদের ভবন, বিপণীবিতান ও অডিটোরিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেতাজী সুভাষ মহাবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবন, ৮ কোটি ৫১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রমেশ স্কুলের বিচিত্রা হল ও নয়াভবন, ৫ কোটি ৭৯ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা ব্যয়ে রমেশ স্কুল মাঠে সিন্থেটিক টার্ফ বসানো, ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজারবাগ মোটরস্ট্যান্ড, ১৬ কোটি ২৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০০ শয্যা বিশিষ্ট যুব আবাস এবং ২৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলাশাসক অফিসের ভবন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ভার্চুয়ালি গামারিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের দ্বারোদঘাটন করেন। এই নবনির্মিত দ্বিতল ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রশাসনিক পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এই লক্ষ্যে আগরতলার গুর্খাবস্তিতে বহুতল বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের সমস্ত ডাইরেক্টোরেটকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কাজ শুরু হয়েছে।
এতে ব্যয় হবে ১৩৪ কোটি টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। তাছাড়াও ক্রীড়াবিদদের মৌলিক সমস্যার সমাধান করে ক্রীড়া পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তুলতে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম৷ যুব সমাজকে নেশার কবল থেকে রক্ষা করতে পারে খেলাধুলা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের আগরতলা, ধর্মনগর ও উদয়পুরে তিনটি স্যাটেলাইট টাউন গড়ে তোলা হবে৷ জনজাতি এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নেও সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারিত হয়েছে।
ক্রীড়াক্ষেত্রে জিমন্যাস্টিকস, অ্যাথলেটিক্স, হকি, সুইমিং সহ বিভিন্ন ইভেন্টে যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোচের অভাব না হয় সেদিকেও সরকার নজর রেখেছে৷ উমাকান্ত মিনি স্টেডিয়াম, উদয়পুরের চন্দ্রপুর স্কুল মাঠ, জিরানীয়া, মোহনপুর, খোয়াইয়ে সিন্থেটিক টার্ফ ফুটবল মাঠ নির্মাণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় বলেন, আজ যে সমস্ত প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে তা আগামীদিনে উদয়পুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করবে৷
রাজ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে কাজ শুরু হয়েছে তা আগামীদিনেও অব্যাহত থাকবে। অনুষ্ঠানে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিঙ্কু রায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতে আধুনিক ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। রাজ্য সরকারও জেলাগুলিতে আধুনিক ক্রীড়া পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে।
শিলান্যাস ও দ্বারোদঘাট উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন শীতলচন্দ্র মজুমদার, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, পরিবহণ দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, গোমতী জেলার পুলিশ সুপার নমিত পাঠক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন গোমতী জেলার জেলাশাসক তড়িৎকান্তি চাকমা।